✨ ভূমিকা
ইসলামের বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১১তম মাস হচ্ছে জ্বিলকদ (ذو القعدة)। এটি চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুম) একটি, যার ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য ক্বোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। জ্বিলকদ মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল, এই মাসে মুসলমানরা আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করত। বর্তমান যুগেও, এই মাসে আমাদের করণীয় রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল।
🔎 জ্বিলকদ মাসের পরিচয়
‘জ্বিলকদ’ শব্দের অর্থ — বসে থাকা বা বিরত থাকা। আরবরা এ মাসে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকত বলেই এই নামকরণ। এই মাসে শান্তি, নিরাপত্তা ও আত্মিক উন্নতির দিক নির্দেশনা দেয় ইসলাম।
📖 ক্বোরআনের আলোকে জ্বিলকদ মাসের মর্যাদা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ...
“আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারোটি... এর মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। এগুলোতেই তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না।”
— সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩৬
এই চারটি মাস হচ্ছে:
-
জ্বিলকদ
-
জ্বিলহজ্জ
-
মুহাররম
-
রজব
📜 হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ফজিলত
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
"বছরের বারটি মাসের মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস রয়েছে। তিনটি একসাথে: জ্বিলকদ, জ্বিলহজ্জ ও মুহাররম; আর একটি রজব।"
— সহীহ বুখারী: ৩১৯৭
আরও একটি হাদীসে রয়েছে:
“হারাম মাসে পাপ কাজ করা অন্য মাসের তুলনায় বেশি গুনাহের কারণ হয়।”
— তাফসীর ইবনে কাসীর, ৯:৩৬ এর ব্যাখ্যা
📆 ঐতিহাসিক গুরুত্ব
১. হুদায়বিয়ার সন্ধি (৬ হিজরী)
এই মাসেই রাসূল (ﷺ) ও কুরায়শদের মধ্যে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়, যা পরবর্তীতে ইসলামের বিজয়ের দরজা খুলে দেয়। এটা ছিল ইসলামী কূটনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
২. হজের প্রস্তুতির মাস
যেহেতু হজের মাস জ্বিলহজ্জ, তাই পূর্ববর্তী মাস হিসেবে জ্বিলকদকে হজের প্রস্তুতির মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহাবাগণ এই মাসেই হজের সফরের প্রস্তুতি নিতেন।
🕋 হারাম মাসে আমলের গুরুত্ব
ক্বোরআন ও হাদীসে হারাম মাসে আমল ও গুনাহ সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
❌ হারাম মাসে গুনাহের শাস্তি বেশি
যেহেতু এই মাসগুলিকে সম্মানিত বলা হয়েছে, তাই এখানে গুনাহের ভয়াবহতা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
✅ নেক আমলের সাওয়াব বেশি
আল্লামা ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন:
"এই মাসে নেক আমল করলে তার সাওয়াব অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়, আর গুনাহ করলে তার শাস্তিও তেমনি বহুগুণ হয়।"
🛐 জ্বিলকদ মাসে করণীয় আমলসমূহ
১. 🌙 নফল রোজা রাখা
-
সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা রাখা মুস্তাহাব।
-
হারাম মাসে রোজা রাখলে বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
২. 📖 কুরআন তিলাওয়াত
-
এ মাসে নিজেকে কুরআনের আলোয় উদ্ভাসিত করা উচিত। প্রতিদিন অন্তত ১ পারা তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. 🤲 দোয়া ও ইস্তেগফার
-
“আস্তাগফিরুল্লাহ” পাঠ করে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দিনে ৭০ বারের বেশি ইস্তেগফার করতেন।
৪. 🕋 হজের প্রস্তুতি নেওয়া (যাদের সামর্থ্য আছে)
-
জ্বিলকদ মাসে হজে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি ও কাফেলার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়।
৫. 😇 আখলাক সুন্দর রাখা ও গিবত থেকে বিরত থাকা
-
এই মাসে অন্যের হক নষ্ট না করা, কারও মনে কষ্ট না দেওয়া, এবং গিবত-শেকায়েত থেকে দূরে থাকা জরুরি।
🌱 আত্মশুদ্ধির মাস
জ্বিলকদ মাস হচ্ছে আত্মশুদ্ধির মাস। যে ব্যক্তি এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে, ইনশাআল্লাহ, তার জন্য রাহমাত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে যাবে।
📚 রেফারেন্স
|
|---|








