কুরআনের আলোকে নবী ঈসা (আঃ)-এর জীবনচিত্র

 



ব্লগ পোস্ট:

ভূমিকা:

ঈসা (আঃ), যিনি খ্রিষ্টানদের কাছে যীশু (Jesus) নামে পরিচিত, ইসলামে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত নবী। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আঃ) অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ মুজিজা লাভ করেন এবং মানুষের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ঈসা (আঃ)-এর জীবনচরিত তুলে ধরব।


ঈসা (আঃ)-এর অলৌকিক জন্ম:

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

"তিনি (মারইয়াম) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার কেমন করে সন্তান হবে, যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি?’ আল্লাহ বললেন, ‘এটা তো আল্লাহর জন্য সহজ, আমি মানুষদের জন্য তাকে নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে এক অনুগ্রহ বানাবো।’"
সূরা মারইয়াম, আয়াত ২০-২১

মারইয়াম (আঃ)-এর গর্ভে পিতা ছাড়াই ঈসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। এটি আল্লাহর এক মহান নিদর্শন। এই অলৌকিক ঘটনাটি ইসলামের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।


শিশু অবস্থায় কথা বলা:

"সে বলল, 'আমি তো আল্লাহর এক বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দান করেছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।'"
সূরা মারইয়াম, আয়াত ৩০

নবী ঈসা (আঃ) শৈশবেই অলৌকিকভাবে কথা বলেন, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর কুদরতের প্রমাণস্বরূপ।


নবুয়ত ও দাওয়াত:

ঈসা (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত এক নবী। তিনি ইনজীল গ্রন্থ লাভ করেন এবং পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যতা প্রদান করেন। তিনি আল্লাহর একত্বের দাওয়াত দেন এবং মানুষকে প্রকৃত পথের দিকে আহ্বান জানান।

"আমি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নিদর্শনসহ আগমন করেছি... অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।"
সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৫০


মুজিজা ও অলৌকিক ক্ষমতা:

আল্লাহ ঈসা (আঃ)-কে অসাধারণ মুজিজা দান করেছিলেন:

  • মৃতকে জীবিত করতেন

  • জন্মান্ধকে আরোগ্য দিতেন

  • মাটি দিয়ে পাখির মূর্তি বানিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে জীবিত করতেন

  • রুগ্নদের নিরাময় করতেন

"আমি তোমাকে রূহুল কুদুস দ্বারা শক্তি দিয়েছি, তুমি মাতৃগর্ভে ও পরিণত বয়সে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছ এবং তুমি ধার্মিক ছিলে..."
সূরা আল-মায়েদা, আয়াত ১১০


শলীবিদ্ধ হওয়া নয়, বরং উত্থাপন:

মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করা হয়নি বরং আল্লাহ তাঁকে জীবিত অবস্থায় আকাশে তুলে নিয়েছেন।

"তারা তাঁকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য বিষয়টি সন্দেহজনক করে তোলা হয়েছিল... বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন।"
সূরা নিসা, আয়াত ১৫৭-১৫৮


প্রাচীন ভবিষ্যদ্বাণী: তাঁর পুনরাগমন

ইসলামী বিশ্বাস মতে, কিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) আবার দুনিয়ায় ফিরে আসবেন, দাজ্জালকে পরাজিত করবেন এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন।

"আবূ হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ) নাযিল হবেন...’"
সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৪৪৮


উপসংহার:

ঈসা (আঃ) ইসলাম ধর্মে একজন শ্রদ্ধেয় নবী এবং তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আল্লাহর কুদরতের প্রতিফলন। তিনি মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছিলেন এবং তাঁর জীবনের নানা অলৌকিক ঘটনা মুসলিম বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

প্রস্তাবিত সোর্স/রেফারেন্স:

  1. কুরআন মাজীদ — সূরা মারইয়াম, সূরা নিসা, সূরা আলে ইমরান, সূরা আল-মায়েদা

  2. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম — হাদীস সংখ্যা: ৩৪৪৮, ৪৩১০

  3. তাফসীর ইবনে কাসীর — উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহের তাফসীর

  4. Darussalam Publishers — “Stories of the Prophets” by Ibn Kathir

     

    #ঈসা_আঃ #নবীদের_জীবনী #ইসলামে_যীশু #কুরআনের_নবী #ইসলামিক_জ্ঞান #মুসলিম_বিশ্বাস #অলৌকিক_জন্ম #ইনজীল #ঈসা_আঃ_জীবনী #পুনরাগমন

 

إرسال تعليق

0 تعليقات
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.