কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত
ভূমিকা:
পবিত্র কুরআন—আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এটি শুধুমাত্র পড়া বা মুখস্থ করার জন্য নয়, বরং বুঝে আমল করার জন্য নাজিল হয়েছে। কুরআন তিলাওয়াত এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, হৃদয়ে প্রশান্তি পায়, আর পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করে।
---
১. কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
> "এই কিতাবটি (কুরআন) যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, এটি খুবই বরকতময়, যেন তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা করে এবং যেন বোধশক্তিসম্পন্নরা উপদেশ গ্রহণ করে।"
(সূরা ছাদ, আয়াত ২৯)
এই আয়াতটি কুরআন তিলাওয়াত ও তাদাব্বুর (চিন্তাভাবনা) করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। কুরআনের প্রতিটি শব্দ, হরফ, আয়াত এবং সূরায় অসীম ফজিলত রয়েছে।
---
২. হাদীসের আলোকে তিলাওয়াতের ফজিলত:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
> "যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর পড়ে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রতিটি নেকি দশ গুণ বৃদ্ধি পায়। আমি বলি না 'আলিফ-লাম-মিম' একটি অক্ষর; বরং 'আলিফ' একটি অক্ষর, 'লাম' একটি অক্ষর, 'মিম' একটি অক্ষর।"
(তিরমিজি: ২৯১০)
এ থেকে বোঝা যায়, কুরআন তিলাওয়াত কেবল ইবাদতের মাধ্যম নয়, বরং এটি অগণিত সাওয়াব অর্জনের উপায়ও।
---
৩. কুরআন তিলাওয়াতের উপকারিতা:
আত্মিক প্রশান্তি:
আল্লাহ বলেন:
> "নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।"
(সূরা রা'দ, আয়াত ২৮)
পরকালের সুপারিশকারী:
রাসূল (সা.) বলেন:
> "কুরআন তোমার জন্য সুপারিশকারী হবে অথবা তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।"
(সহীহ মুসলিম: ৮০৪)
মানবিক চরিত্রের উন্নয়ন:
কুরআনের শিক্ষা একজন মানুষকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও বিনয়ী করে তোলে।
---
৪. কিভাবে তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলবেন?
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন (ফজরের পর সবচেয়ে উত্তম)
অল্প করে হলেও নিয়মিত পড়ুন
অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন
সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়ে তুলুন
কুরআনের সাথে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যেন এটি আপনার জীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে
---
উপসংহার:
কুরআন তিলাওয়াত শুধু একটি ধর্মীয় কাজ নয়, বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, জীবনের পথপ্রদর্শক এবং আখিরাতের সফলতার চাবিকাঠি। আসুন আমরা সবাই প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়ে তুলি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে নিজেকে প্রস্তুত করি।
---
রেফারেন্সসমূহ:
1. আল-কুরআন: সূরা ছাদ (৩৮:২৯), সূরা রা’দ (১৩:২৮)
2. সহীহ মুসলিম: হাদীস ৮০৪
3. জামি’ আত-তিরমিজি: হাদীস ২৯১০
4. ইবনে কাসীর তাফসীর
---
ট্যাগসমূহ (Tags):
#QuranTilawat #IslamicBlog #QuranBenefits #কুরআন_তিলাওয়াত #ইসলামিক_পোস্ট #তাফসীর #হাদীস #QuranicVerses #আখিরাত #IslamicReminders