ধান চাষের আধুনিক পদ্ধতি
বাংলাদেশে ধান প্রধান খাদ্যশস্য। কৃষির আধুনিকায়নের ফলে এখন ধানের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ফলন যেমন বাড়ে, তেমনি খরচ ও পরিশ্রম কমে।
১. জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি
-
উর্বর মাটি ও পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা আছে এমন জমি নির্বাচন করুন।
-
চাষের আগে জমিতে গভীর চাষ ও মই দিয়ে সমান করে নিন।
-
প্রয়োজনে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত সার প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিন।
২. বীজ নির্বাচন ও শোধন
-
উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান বেছে নিন (BRRI dhan-28, BRRI dhan-63 ইত্যাদি)।
-
রোগমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন।
-
বীজ শোধনের জন্য:
৫ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার বা ১০ গ্রাম লাল শাক তেলের মিশ্রণ— এতে রোগ কমে।
৩. চারা উৎপাদন ও রোপণ পদ্ধতি
-
ধাপে ধাপে চারা রোপণ বা লাইন পদ্ধতি (Transplanting in rows) ব্যবহার করুন — এতে সার ও পানির ব্যবহার কমে এবং মজুরিও সাশ্রয় হয়।
-
২০–২৫ দিন বয়সী চারা রোপণ উপযুক্ত।
৪. সার ব্যবস্থাপনা
-
মাটির ধরন ও ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সার ব্যবহার করুন:
-
ইউরিয়া
-
টিএসপি
-
এমওপি
-
জিপসাম (প্রয়োজনে)
-
-
সার ২–৩ ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করলে ফলন বাড়ে।
৫. পানি ব্যবস্থাপনা
-
চারা রোপণের পর নিয়মিত সেচ দিন।
-
ধানের গুটি আসা ও দুধ আসার সময় পর্যাপ্ত পানি থাকা বাধ্যতামূলক।
-
পানি অতিরিক্ত জমে থাকলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. আগাছা ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ
-
২০ দিনের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করুন।
-
আধুনিক উইডার মেশিন ব্যবহার করতে পারেন।
-
রোগ দেখা দিলে কৃষি অফিসার বা অভিজ্ঞ কৃষকের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করুন।
৭. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার
-
ড্রোন বা পাওয়ার স্প্রে মেশিন দিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ
-
স্মার্ট কৃষি অ্যাপ দিয়ে সেচ/সার ব্যবস্থাপনা
-
দানা ঝরানো মেশিন বা ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করলে শ্রম ও সময় কমে
৮. ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
-
ধান যখন ৮০–৮৫% পেকে যায়, তখন কাটা উচিত
-
আধুনিক ধান মাড়াই মেশিন ব্যবহার করলে বীজ ক্ষতি কম হয়
-
ধান ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার ও শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে
উপসংহার
আধুনিক ধান চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস এবং সময় সাশ্রয় সম্ভব। সরকার ও কৃষি অফিসারদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।








